১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রচ্ছদ আন্তর্জাতিক জালানি সংকটে ‘ইট অর হিট’ জীবনযাত্রা যুক্তরাজ্যে।।
২৮, আগস্ট, ২০২২, ১১:১৩ অপরাহ্ণ - প্রতিনিধি:

আন্তর্জাতিক তথ্য প্রতিদিব: পূর্ব ইংল্যান্ডের গ্রিমসবি শহর। রেকর্ড তাপপ্রবাহে সেদ্ধ হওয়ার দশা। তবু ঘর ঠান্ডা করতে ফ্যান চালাতে পারছেন না ফিলিপ কিটলি। বিদ্যুতের আকাশ-ছোঁয়া দামের কারণে কুলিং ফ্যান চালানো এখন তার কাছে ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’। ফ্যান চালিয়ে বিদ্যুৎ খরচ করলে পেট ভরে খাওয়ার টাকা থাকবে না জানান তিনি। রয়টার্সকে বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। সংকট না থাকলে তবু জীবন টেনেটুনে চলে যায়। কিন্তু এখন আমার অবস্থা ভয়াবহ। করোনা মহামারির আগে কিটলি ছিলেন একজন কাউন্সিল উপদেষ্টা। গত এপ্রিলে তিনি কাজ হারান। এরপর থেকে মাসে তার সম্বল মাত্র ৭০৬ ডলার। এই অর্থ তিনি পাচ্ছেন সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প থেকে। যার ১৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিল দিতে। ভাতার অর্ধেক চলে যাচ্ছে বাড়িভাড়ায়। এখন দুইবেলা পেটপুরে খাওয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই। ফিলিপ কিটলির মতো যুক্তরাজ্যে এখন অনেকের জীবনেই ‘ইট অর হিট’ অবস্থা। করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে সৃষ্ট টালমাটাল অবস্থা থেকে উত্তরণের আগেই শুরু হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে রকেটের গতিতে তেল-গ্যাসের দাম বেড়েছে বিশ্ববাজারে। এখন যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ জ¦ালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে। গত ১২ মাসে ইউরোপে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫৫০ শতাংশ। আগামী অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়বে আরও ৮০ শতাংশ। গত শুক্রবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, বিদ্যুতের জন্য একটি পরিবারের বছরে গড় খরচ দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ১৮৮ ডলার। এবার শীতকালে তাদের উপার্জনের গড়ে ১০ শতাংশ খরচ হবে শুধু এনার্জিখাতে। এটি একটি রেকর্ড। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী ডন হোয়াইট একজন ডায়ালাইসিসের রোগী। তিনি রয়টার্সকে বলেন, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া মানে বেঁচে থাকার জন্য আর খুব বেশি দিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারব না। বাঁচতে হলে আমারতো সপ্তাহে পাঁচবার অন্তত ডায়ালাইসিস মেশিন চালাতে হবে। ইউরোপের মানুষ ইতোমধ্যে কাপড় ইস্ত্রি করা কমিয়ে দিয়েছে। তাঁরা ওভেন ব্যবহার কমিয়েছে। এমনকি বাসায় গোসলও করছে কম। এত কিছুর পরেও বেড়ে চলেছে বিদ্যুৎ বিল। ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ারনেস ট্রাস্টের এক পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাজ্যের এক তৃতীয়াংশ বাড়িতে ওভেন ও কুকার ব্যবহার কমেছে। এক তৃতীয়াংশ মানুষ গোসল করা কমিয়ে দিয়েছেন। আর অর্ধেক মানুষ তাদের বাড়িতে এখন তাপমাত্রা পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ট্রাস্টের এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জেমি ইভান্স। তিনি বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ বিলের লাগাম টেনে ধরতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই তাঁরা পেরে উঠছে না। যে কারণে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যৌক্তিক পদক্ষেপ দেখতে চাই। প্রসঙ্গত, ১৯৭০ ও ৮০-র দশকের চেয়েও বর্তমান সংকট আরও ভয়াবহ। ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লব ও একটি তেল উৎপাদনকারীর তেল নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা বিশ্বে সংকট তৈরি হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালে সংকট চূড়ায় পৌঁছালে যুক্তরাজ্যের মানুষ তাদের আয়ের ৯.৩ শতাংশ এনার্জিখাতে ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছিল।